Monday, July 16, 2018

রহস্যময় প্রাসাদ

সে দিনটি ছিলো ২১শে ফেব্রুয়ারী রোজ
বুধ বার।আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে
সারাদিন অানন্দ করে রাতে বাড়ি
ফিরছিলাম।হঠাৎ করে রাজু বললো, চলো
সবাই মিলে আজ নাইট ক্লাবে যাই।কিন্তু
আমার আজ মোটেই নাইট ক্লাবে যেতে
ইচ্ছে করছে না বলে উঠতেই সোহেল
বলল,আমিও আজ নাইট ক্লাবে যাবো না।
তাই আমি বললাম- তাহলে তোরা নাইট
ক্লাবে যা, আমি আর সোহেল বরং
বাড়িতে চলে যাই।অবশ্য সে রাতটি
ছিলো আমাবস্যার রাত।এটা বলার
অপেক্ষা রাখে না যে আমাবস্যার রাত
থাকে গভীর অন্ধকারে ঢাকা।আমার আর
সোহোলের বাড়ি একই এলাকায়।
আমাদের কাছে কোনো লাইট ছিলো না।
আমরা দুই বন্ধু পায়ে হেটে জমাট বাধা
অন্ধকার ঠেলে গল্প করতে করতে বাড়ি
ফিরছিলা।কিছুদূর এগোতেই নাকে এলো
উৎকট ভ্যাপসা বাজে এক গন্ধ।সেই সাথে
গরম এক হাওয়া বয়ে গেলো আমাদের উপর
দিয়ে।এই কনকনে শিতে এমন
অপ্রত্যাশিত হাওয়া কেমন যেনো রহস্যময়
লাগছিলো।
এই বিভস্য অন্ধকারে আন্দাজ করলাম
একটা কালো বিড়াল আমাদের পাশ
কাটিয়ে একটু দূরে গিয়ে আমাদের দিকে
তাকিয়ে রইলো অপলক দৃষ্টিতে।যদিও
বিড়ালটার শরীর দেখা যাচ্ছিলো না
তবে তার চোখ দুটো স্পষ্ট দেখতে
পাচ্ছিলাম।একদম রক্তিম চোখে
আমাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
আছে।সোহেল বললোঃ
- আবির ভয় লাগছে
- ধুর পাগল ভয় কিসের?
- বিড়ালটার চোখ দুটো দেখেছিস?কি
ভয়ানক।
-কি যে বলিস,কুকুর বিড়ালের চোখ রাতে
এমনি দেখায়।
আমি সোহেলকে কিছু বুঝতে দিলাম না।
তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছার জন্য একটি
পরিত্যাক্ত সংক্ষিপ্ত পথে চলছি,,,,,
রাস্তাটি দিয়ে তেমন লোক চলাচল করে
না।রাতে তো আরো নয়।মানুষ চলাচল না
করায় রাস্তাটির দু পাশ দিয়ে লতা
পাতায় ছেয়ে গেছে।ঝোপ ঝাপ এবং
লতাপাতায় চারপাশ পরিপূর্ন।ভূত প্রেতে
আমার তেমন বিশ্বাস নেই।তাই নির্ভয়ে
এ রাস্তা ধরেই হাটছি।হঠাৎ করেই
জঙ্গলের পূর্ব পাশ থেকে শেয়ালের
কান্না মিশ্রিত অদ্ভুত হুক্কার।অজানা
এক ভয়ে শরীরটা শীউরে উঠলো।আমরা
প্রায় আমাদের এলাকায় এসে পরেছি।
আমাদের এলাকায় একটি পুরোনো
ভাঙ্গা রাজ প্রাসাদ রয়েছে।তার
সামনে দিয়েই আমাদের গ্রামে যাওয়ার
রাস্তা।কথিত আছে প্রায় ২০০ বছর পূর্বে
এক হিন্দু রাজা এখানে রাজত্ব করতো।
রাজাটি ছিলো খুব বাজে।খাজনা
আদায়ের জন্য গরীব কৃষকের উপর চালাতো
নির্মম অত্যাচার।তার ঐ রাজ্যে কোনো
সুন্দরী যুবতী দেখলেই ছলে বলে কৌশলে
তাদের সম্ভ্রম নষ্ট করতো।আর এর
প্রতিবাদ করতে গেলেই প্রান দিতে
হতো।এক রাতে কোনো এক দরবেশ সেই
প্রাসাদে আশ্রয় পাওয়ার আশায় গেলে,
রাজা তাকে আশ্রয় না দিয়ে মুসলমান
পীর বলে মারতে মারতে প্রাসাদ থেকে
বের করে দেয়।সেই দরবেশের অভিশাপে
ঐ রাতেই সমস্ত প্রাসাদটি একটি ধ্বংশ
স্তুপে পরিনত হয়।এতে রাজার বংশ
নিরবংশ হয়ে যায়।সেদিন থেকে কোনো
মানুষ ঐ প্রাসাদের ধারে কাছে যায় না।
তা ছাড়া মাঝে মধ্যে ঐ ভাঙ্গা রাজ
প্রাসাদ থেকে নাকি কান্নার আওয়াজ
শোনা যায়।
আমি আর সোহেল হাটতে হাটতে যখন
প্রাসাদের নিকট আসলাম, আমরা অবাক
হয়ে তাকিয়ে রইলাম সেই প্রাসাদের
দিকে।সমস্ত প্রাসাদ যেন একটি আলোর
ফোয়ারা।আমাবস্যার অন্ধকার যেনো এই
আলোর নিকট বিলিন হয়ে গেছে।একটা
বিষয়ের উপর লক্ষ করে আমার শরীর হিম
হয়ে আসলো।যে প্রাসাদ দুইশ বছর থেকে
ভাঙ্গা পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে
রয়েছে,আজ তা কিভাবে আলোক সজ্জায়
পরিপূর্ন হতে পারে!!!
ভাবতে ভাবতে প্রাসাদের ভিতর থেকে
আসা একটি সুগন্ধে আকুল হয়ে অজানা এক
আকর্ষনে প্রাসাদের দিকে যেতে
থাকলাম।এক সময় আমরা বুঝতে পারলাম
আমরা প্রাসাদে প্রবেশ করেছি।সমস্ত
প্রাসাদ আলোক সজ্জায় পরিপূর্ন।উপরে
ঝারবাতি ঝুলছে, মেঝেতে বাহারি
রঙের কার্পেট।
ভালো ভাবে লক্ষ করে দেখলাম কক্ষের
এক কোনায় পালঙ্কে শুয়ে আছে এক
অপরূপ সুন্দরী মেয়ে।সব কিছু স্বপ্নের মতো
লাগছিলো।নিজের চোখকে যেনো
বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।স্বপ্ন কি
না যাচাই করতে নিজের শ্বরীরে চিমটি
কেটে উহ শব্দ করে উঠতেই মেয়েটির ঘুম
ভেঙ্গে গেলো এবং মিষ্টি হাসি দিয়ে
বললোঃ
- আমি তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছি।
তার পর অপরূপ সুন্দরী মেয়েটি আমাদের
অন্য একটি কক্ষে নিয়ে গেলো।অতপর
মেয়েটি দুইটি গ্লাসে সরবত এনে দিয়ে
খেতে বললো।আমরা তার কথা মতো সরবত
টা খেয়ে নিলাম।আমরা যেনো তার
কথার পুতুল হয়ে গেছি।কিছুক্ষনের মধ্যে
সরবত নেশায় শরীর টোলতে লাগলো।
হঠাৎ করে চারপাশ থেকে মন মাতানো
বাদ্যযন্ত্রের শুর ভেসে আসতে থাকলো।
সেই শুরের তালে তালে মেয়েটি নেচে
গেয়ে আমাদের আনন্দ দিতে থাকলো।
আমরা মেয়েটির মায়া জালে আটকা
পরে গেলাম।এভাবে কতক্ষন চলে গেছে
জানি না।হঠাৎ বাহিরে বিকট এক শব্দে
আমাদের হুশ ফিরে আসলো।মুতুর্তেই
বাদ্যযন্ত্রের শুর কোথায় যেনো বিলীন
হয়ে গেলো।শুনতে পেলাম সেই কান্না
মিশ্রিত শেয়ালের হুক্কা হুয়া।জোরে
জোরে ঘরের ভিতরে বাতাস প্রবাহিত
হতে থাকলো,,,ঝারবাতি গুলো একবার
জ্বলছে একবার নিভছে।চোখের পলকে
অপরূপ সুন্দরী মেয়েটি ভয়ঙ্কর ডাইনীর রূপ
ধারন করলো এবং কোনো কিছু বুঝে ওঠার
আগেই হিংস্রো পশুর মতো ঝাপিয়ে
পড়লো আমাদের উপর।ডাইনী তার দু হাত
দিয়ে আমার এবং সোহেলের গলা
স্বজোরে চেপে ধরলো।তার তরবারীর
মতো ধারালো নখের আঘাতে আমাদের
গলা ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে।চোখের
সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছিলো।
মৃত্যু যন্ত্রনায় হাত পা নাড়াচাড়া করছি।
হঠাৎ হাতের কাছে সরবতের গ্লাসের
নাগাল পেলাম।বিলম্ব না করে গ্লাসটা
শক্ত করে ধরে স্বজোরে ডাইনীর মাথায়
আঘাত করলাম।একটি আর্তনাদ করে সে
ছিটকে দূরে সরে গেলো।ভয়ে মরি মরি
অবস্থা। জীবন বাচাঁনোর জন্য দুজনে উঠে
দিলাম দৌড়।এদিকে বাইরে বেরুনোর
রাস্তা হারালাম। ডাইনী উঠে দাড়িয়ে
গর্জন ছাড়তে থাকে।সেই গর্জনে যেনো
আকাশ বাতাস থর থর করে কাঁপছিলো।সে
আমাদের দিকে আগুনের লালা ছুড়তে
লাগলো।অবশেষে বাহিরে বেরুনোর
রাস্তা খুজে পেলাম।ডাইনী আমাদের
পিছু ছাড়েনি।আমাদের ঘায়েল করার
জন্য বড় বড় গাছ উফরিয়ে আমাদের নিকট
ছুড়তে লাগলো আমরা প্রানপন
দৌড়াচ্ছি।হঠাৎ করে একটা গাছের গুড়ির
সাথে হোচট খেয়ে রাজ প্রাসাদের
প্রধান গেটের বাইরে ছিটকে পরে
গেলাম।মুহুর্তের মধ্যে ফজরের আজানে
চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠলো।বিশাল
দেহের ডাইনীটি চোখের পলকে
বাতাসে মিশে গেলো।সোহেল আমাকে
জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো।নির্ঘাত
মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আমরা যার যার
বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।ততক্ষনে
ভোরের ডাকে চারপাশ ফর্সা হয়ে
এসেছে।
লেখক

No comments:

Post a Comment