ফোনে ক্রিং ক্রিং শব্দে সকালের মিষ্টি ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।কল রিসিভ করতেই বিপরীত প্রান্ত থেকে ভেসে আসলো বর্ষার আওয়াজ।
- হ্যালো (আমি)
- তোমার এত্তো সময় লাগলো কল রিসিভ করতে? সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি তোমাকে।(বর্ষা)
- আমি ঘুমে ছিলাম তো বাবু।তোমার কল পেয়েই তো ঘুম ভাঙ্গলো।(আমি)
- তুমি আমায় মোটেই ভালোবাসো না আবির।(বর্ষা)
- উফ বাবু বুঝার চেষ্ঠা করো।(আমি)
- আমি কিছু বুঝতে চাই না।আমায় সত্যি ভালোবাসলে ২০ মিনিটের মধ্যে ক্যাম্পাসে আমার সাথে দেখা করবা,রাখলাম বাই।(বর্ষা)
- এই আমি তো রেডি হই নি এখনো। হ্যালো,,,,,,
ধুর সকালটাই শুরু হলো প্যাড়া দিয়ে।অনেক সাধ করে একটা প্রেম করেছিলাম।প্রেমে এতো প্যাড়া জানলে এর ধারে কাছে ভিরতাম না।
বাসা থেকে ভার্সিটি ক্যাম্পাস ১৫ মিনিটের রাস্তা।তাই ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়ে পরলাম।আমাকে দেখে বর্ষা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,
- যাক বাবা, সময় মত তাহলে আসতে পেরেছো?দেরি হলে এক ঘুষিতে নাক বোচা করে দিতাম।(বর্ষা)
- তুমি একটা পাগলি মেয়ে,সকাল সকাল আমায় হয়রানি করালে।(আমি)
- সরি জানু, ভালোবাসার পরিক্ষায় তুমি পাশ।একশ তে ৯৫ পাইছো।(বর্ষা)
- কিহ্,,,,, আর পাঁচ নম্বর গেলো কোথায়?(আমি)
- তুমি জানো না খালি হাতে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে নেই।(বর্ষা)
- আল্লাহ আমারে উডাই লউ,,ব্রেকফাস্ট না কইরা এই মাইয়ার পিছে আইছি আর হেতে কয় কি?(আমি)
- হাহাহাহাহ,,, আমিও কিছু খাইনি।চলো একসাথে ব্রেকফাষ্ট করবো।
(বর্ষা)
একটু পরেই সেলফোনটা বেজে উঠলো।
- ভাইয়া বাড়িতে ফেরার সময় মনে করে লাইব্রেরী থেকে অামার জন্য বাংলা ২য় পত্র আর ইংলিশ গ্রামার বই নিয়ে আসিস।(কথা)
- ঠিক আছে আনবো, রেখে দে।(আমি)
- ওকে ভাইয়া।(কথা)
আমার এক মাত্র ছোটবোন কথা।এবার ক্লাস নাইনে।অনেক মেধাবী ছাত্রী।মাঝে মাঝে বাবা বলতো
- তোর ছোট বোনকে দেখে কিছু শিখে নে।মাথায় তো গোবর ছাড়া আর কিছু নেই তোর।
কথাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন।বাবা মার ইচ্ছা ওকে ডাক্তার বানাবে।
বাসায় ফিরে কথার হাতে বইয়ের প্যাকেট দিয়ে বললাম-
- নতুন বই এনে দিলাম ভালো ভাবে পড়বি বুঝলি?আর যখন তখন ফেইসবুকে যেনো না দেখি।
নতুন বই পেয়ে কথা খুব খুশি।মা ডেকে বললো
- আবির এসেছিস?
- হ্যা মা।
- ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।
খাওয়া শেষ করে রুমে এসে লম্বা একটা ঘুম দিলাম।কতক্ষন ঘুমিয়েছিলাম জানি না।জেগে মোবাইলে টাইম দেখার জন্য পাওয়ার বাটনে চাপ দিতেই দেখলাম বর্ষার পাঁচটা মিসকল উঠে আছে।ফন ব্যাক করতেই
- হ্যালো কে বলছেন?(বর্ষা)
- বর্ষা আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো।কি খবর বলো।(আমি)
- আমার খবর তুমি রাখো? উল্টো তোমার খবর আমায় নিতে হয়।আজ কত তারিখ মনে আছে তোমার?(বর্ষা)
- ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ মনে হয়।কেনো?(আমি)
- ভালোবাসা দিবসের আর তিন দিন বাকী, মনে যেনো থাকে।(বর্ষা)
- হুম(আমি)
- আমায় কি গিফ্ট দিবে শুনি?(বর্ষা)
- বাগানের ফুটন্ত লাল গোলাপ দিয়ে তোমায় প্রেম নিবেদন করবো জানু।(আমি)
দেখো আজাইরা আলাপ পারবা না, মনির বয়ফ্রেন্ড আবিদ তাকে ভ্যালেন্টাইন'স ডে তে আইফোন গিফ্ট দিতে চেয়েছে।আমি তো আর তা চাইনি, তবো বন্ধু বান্ধব যেনো আমায় বলতে না পারে তোর বয়ফ্রেন্ড একটা ফকির।(বর্ষা)
- ওরে বাপ রে।বেশ ভালো।আমার বাবার অনেক টাকা থাকলে ওর থেকে ভালো ফন কিনে দিতে পারতাম।আমার টাকা না থাকলেও বুক ভরা ভালোবাসা আছে।(আমি)
- তোমার ভালোবাসা ধুয়ে ধুয়ে পানি খাও,রাখলাম।(বর্ষা)
- এই হ্যালো, আচ্ছ আমি তোমায় ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবো।
দিন যতই যাচ্ছে ভালোবাসা সুখের বদলে ততই যেনো আমার জন্য পীড়াদায়ক হয়ে যাচ্ছে।গার্লফ্রেন্ডের চাহিদা মেটাতেই আমি শেষ।চার হাজার টাকা থেকে কথার জন্য বই কিনেছি এক হাজার টাকার।বাকী তিন হাজার আছে।এ দিয়ে কিচ্ছু হবে না।দু দিনের মধ্যে কমপক্ষে আরো দুই হাজার টাকা মেনেজ করতে হবে।না হলে পাখি ফুরুত করে অন্ন ডালে গিয়ে বসবে।ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা চমৎকার বুদ্ধি চলে আসলো।কাল সকালে বাবার কাছ থেকে বই কেনার কথা বলে দুই হাজার টাকা নিলে সমস্যা সমাধান হবে।বাহ্ কি বুদ্ধি আমার, তারিফ করতে হয় ঘিলুর।।
সকালে ফ্রেস হয়ে বাবাকে বললাম-
- বাবা আমার কিছু টাকা লাগবে বই কেনার জন্য।
- বই কিনে লাভ কি শুনি? তোকে তো কখনো পড়তে দেখি না।কথা বই কেনার কথা বলে এক হাজার টাকা নিয়ে গেলো।তোর কত লাগবে?(বাবা)
- দুই হাজার হলেই হবে বাবা।(আমি)
- তোর মার কাছে রাখা আছে নিয়ে নিস।(বাবা)
আমি রুমে এসে ভাবতে লাগলাম কথার তো সব বই কেনা শেষ।তাহলে টাকা দিয়ে কি করবে? হাত খরচার জন্য তো আর এক হাজার টাকা লাগার কথা না।আর ও মিথ্যা বলার মতো মেয়েও না।বিষয়টা জানার জন্য ওর রুমের কাছে যেতেই শুনতে পেলাম,
- হ্যালো পুতুল, ভালোবাসা দিবসে একজনকে উইস করতে চাই, কোন ধরনের গিফ্ট দিবো বলতো? (কথা)
আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরে কথা ফোনটা কেটে দিয়ে বললো,
- ভাইয়া কিছু বলবি?(কথা)
- না মানে, তোর ইংলিশ গ্রামার বই টা আমার একটু প্রয়োজন ছিলো।(আমি)
- আচ্ছা নিয়ে যা।(কথা)
আমি বই নিয়ে রুমে এসে হতভম্ব হয়ে বিছানায় বসে পড়লাম।তাহলে কি কথা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে।কথার উপর আমার খুব রাগ হচ্ছিলো।মনে মনে ভাবলাম আমায় খুঁজে বের করতে হবে কোন ছেলের সাথে ও প্রেম করে, তারপর ওর একদিন কি আমার একদিন।
টানা দুইদিন কথাকে ফলো করা সত্যেও কোনো ছেলের সন্ধান পেলাম না।তবে একদিন একটা গিফ্টের বক্স সহ ওকে রুমে প্রবেশ করতে দেখেছি।বুঝতে অসবিধা হলো না যে গিফ্ট টা ঐ ছেলেকে দেওয়ার জন্য কিনেছে।হয়তো টের পেয়ে গিয়েছিলো আমি ওকে ফলো করছি, তাই ছেলেটার সাথে দুইদিন কোনো দেখা করে নি।তবে আমিও ছাড়ছি না।কাল ভালোবাসা দিবসে যখন গিফ্ট নিয়ে ঐ ছেলের সাথে দেখা করতে বের হবে তখনি ওকে ধরে ফেলবো।রাতে টেনশনে ভালোভাবে ঘুম হয় নি।
১৪ই ফেব্রুয়ারি ভোর ৭টায় বর্ষাকে উইস করতে ভার্সিটির ক্যামপাসে আসি।অতপর তাকে সপিং করে পাঁচ হাজার টাকা থেকে অবশিষ্ট পাঁচটাকা এক ভিক্ষুককে দিয়ে আমি ভিক্ষারি হয়ে এক ঘন্টার মধ্যে বাসায় চলে আসি।এসে দেখি কথা মনের সুখে গুনগুন করে গান গাইছে আর সাঁজছে।আমি অপেক্ষা করতে থাক
লোখক